পরিবর্তন ডটকম: 

বাংলাদেশে ইয়াবা আসার ও দেশ জুড়ে ইয়াবা ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে যার দায় সবচেয়ে বেশি সে হলো হাজী সাইফুল করিম। কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থল বন্দরের একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে সে বাংলাদেশে কাঠ আমদানি করে থাকে। মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানি করার জন্য তার একাধিক পণ্যবোঝাই জাহাজ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে কাঠ আনার অন্তরালে রয়েছে মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসা। সারাদেশে প্রতিদিন যে ইয়াবা পাচার হয় তার সিংহভাগে জড়িত হাজী সাইফুল করিম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ইয়াবা পাচারকারীর তালিকায় ১ নম্বারে রয়েছে হাজী সাইফুলের নাম। অথচ দেশের শীর্ষ এই ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এক সময় চট্টগ্রামের একটি আঁড়তে সামান্য বেতনে চাকরি করে এখন ইয়াবা ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন হাজী সাইফুল। তার হাতে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দেশের ইয়াবা ব্যবসা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের বড় বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের হাজী সাইফুল করিম সবচেয়ে বিশ্বস্ত। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনতে গেলে সাইফুল করিমের মধ্যস্থতা ছাড়া ইয়াবা আনা যায় না।

সরকারি প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা যতোবারই ইয়াবা পাচারকারীর তালিকা করেছে। প্রতিটি তালিকায় এক নম্বারে রয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার হানিফ ডাক্তারের ছেলে হাজী সাইফুল করিমের নাম। বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুপারিশ করেছে তার প্রতিটিতেই উল্ল্যেখ আছে হাজী সাইফুল করিমকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে ইয়াবা পাচার। এত তালিকা, রিপোর্ট ও সুপারিশের পরও বহাল তবিয়তে হাজী সাইফুল। বছর তিন আগে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও এখন পুলিশের সরাসরি সহযোগীতায় প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা সারাদেশে নিয়ন্ত্রন করছে। সাইফুলের ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের সবচেয়ে শক্তিশালী অসাধু একটি সিন্ডিকেট। চট্রগ্রামের সরকারী দলের  প্রভাবশালী দুই জন দুই ধরনের জনপ্রতিনিধিও এই সিন্ডিকেটে জড়িত।

সরকারী সংস্থার সর্বশেষ তথ্য মতে  নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমারের ১৭টি ইয়াবা কারখানা প্রতিদিন প্রায় ২ কোটির বেশি প্রাণঘাতি ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। এই বিশাল অংকের ইয়াবার বেশিরভাগ পাচার হচ্ছে সাগর পথে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে মিয়ানমার থেকে সাগর পথে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা পাচার করে হাজী সাইফুল। হাজি সাইফুলের ইয়াবাগুলো সাগরপথে মাছধরার ট্রলারে করে চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট দিয়ে তোলা হয়। চট্টগ্রামে হাজী সাইফুলের ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িত সিএমপির কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। বিশেষ করে সিএমপির কোতোয়ালি ও বন্দর থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাইফুল করিমকে সহযোগিতার অভিযোগ আছে। এই পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেও সাইফুল করিম সখ্য গড়ে তুলেছে।

ইয়াবা ব্যবসা ছাড়াও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যৌথ মালিকানাধীন কক্সবাজারে দুইটি হোটেল ব্যবসাও আছে। হাজী সাইফুল চট্টগ্রামের ফিসারীঘাটে বা বন্দর এলাকায় ইয়াবার চালান আনলোড করার সময় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে এই পুলিশ কর্তারা।

একসময় টেকনাফের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পৃষ্ঠপোষকতায় সাইফুর ইয়াবা ব্যবসা করলেও এখন সে বদিকেও ছাড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রামের দুইজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিকে হাত করে সাইফুল ইয়াবার নেটওয়ার্ক বিস্তার করছে। সরকারদলীয় ওই দুই জনপ্রতিনিধির চট্টগ্রামে বিশাল বাহিনী রয়েছে। ওই বাহিনী দিয়েও সাইফুলের ইয়াবা চালানের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।

দুইমাস আগে কক্সবাজারে কলাতলির সাইফুলের এস কে কটেজে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে অংশ নেয়া এক জানিয়েছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত মে মাসের শুরুর দিকে কক্সবাজারে কলাতলিতে হাজী সাইফুলের এস কে কটেজে ঘেরাও করা হয়। তাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য ছিল সাইফুল করিম ওই বাসায় অবস্থান করছেন। ফোর্স নিয়ে সাইফুল করিমকে ধরতে ওই কটেজে ঢোকার আগ মুহূর্তে এমন একটি ফোন পান যা দেখে তিনি চমকে ওঠেন। ওই ফোন পাওয়ার পর চাকরি হারানোর ভয়ে তারা সাইফুলকে না ধরে ফেরত চলে আসেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্যমতে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেও সাইফুল করিমের নিয়মিত যোগাযোগ আছে।

 

র‍্যাবের কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানিয়েছেন, হাজি সাইফুলের ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করাগেলে দেশের ইয়াবা পাচার অর্ধেকে চেয়ে বেশি কমে আসবে। তাকে ধরার জন্য র‍্যাব খুবই আন্তরিক ও তৎপর। তাকে ধরতে বেশ কয়েকটি স্থানে নজরদাড়ি বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল মাঝে মধ্যে নিজেকে হাজী, আলেম, ক্রীড়ামোদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেশ ধর।

গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের হৃদ্যতা রয়েছে তার সঙ্গে। টেকনাফ-কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সাইফুলের বাড়িতে অনেক কর্মকর্তা নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরফাজুল হক টুটুল জানান, সাইফুল করিম সবচেয়ের বড় ইয়াবা পাচারকারীর। তাকে ধরতে পারলে ইয়াবা জগতের অনেক তথ্য অজানা তথ্য জানাযাবে। প্রায় সময় সে আত্মগোপনে থাকে। তাই তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাকে ধরার জন্য খোঁজা হচ্ছে।